কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় একই ইউনিয়নের চার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনাকালে ৭৫ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রয়েছে। অভিভাবকদের কথা দেশ কখনও স্বাভাবিক হবে কিনা বা বেঁচে থাকবেন কিনা এই চেতনা থেকে বিয়ে দিয়েছেন। বুধবার উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।

তার মধ্যে দয়ারামপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী পর্যন্ত ১৯ জন, মহেন্দ্রপুর দারুস সুন্নাহ বালিকা আলিম মাদ্রাসার অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২১ জন, মহেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫ জন এবং চরভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী পর্যন্ত ২২ জন। এ ছাড়া ২০নং দয়ারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অধিকাংশ অভিভাবক জানান, করোনার মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ দেশ কখনও স্বাভাবিক হবে কিনা বা বেঁচে থাকবেন কিনা এমন চেতনা থেকে বিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল আর কখনও খুলবে কিনা তার নিশ্চয়তা ছিল না। তা ছাড়া আগে অনেক মেয়েরই ৮-৯ বছরেও বিয়ে হয়েছে।

কম বয়সে বিয়ে দিলে সমস্যা কী? মহেন্দ্রপুর দারুস সুন্নাহ বালিকা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পেরেছি অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। তবে বিবাহিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে এখনও নিয়মিত ক্লাস করছে। দয়ারামপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেড় বছরের মতো বন্ধ ছিল।

এই সময়টাতে অনেকের বাল্যবিবাহ হয়েছে জানতে পেরেছি। তা ছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। আমরা কিছু অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন— আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তারা তাদের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মহেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম খান বলেন, করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে গেছে।

এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মেয়েরই বাল্যবিয়ে হয়েছে, যা আমরা প্রতিষ্ঠান খোলার পর জানতে পেরেছি। চরভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল লতিফ খান বলেন, এলাকার মানুষের মধ্যে শিক্ষার হার কম ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণ এবং স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে দিয়েছেন তাদের অভিবাবক।

২০নং দয়ারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামসুল আলম বলেন, স্কুল খোলার পর জানতে পারি আমাদের প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন বাল্যবিয়ে হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিবারিক অসচ্ছলতা এবং ভালো পাত্র পাওয়ার কারণে বিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুর রশিদ জানান, করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকাবস্থায় বাল্যবিয়ে হয়েছে, যে কারণে জানতে পারিনি। তবে সংবাদ পেলে তাৎক্ষণিক ইউএনও ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে দিয়ে আমরা বাল্যবিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা করে থাকি। কুমারখালীতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি রয়েছে সন্তোষজনক।